লক্ষ্মীপুরে জোয়ারে প্লাবিত উপকূলীয় এলাকা, দুর্ভোগ বাসিন্দাদের


নিজস্ব সংবাদদাতা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি মেঘনা নদী সংলগ্ন জেলার রামগতি, কমলনগর, সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন এবং রায়পুরের উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পানি ঢুকে গেছে।
এতে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যায়। দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানায়, নদীর তীরবর্তী বাঁধ না থাকায় খুব সহজে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। তীররক্ষা কাজ চলমান থাকলেও বাঁধ এখনো নির্মাণ হয়নি।
সরেজমিনে জেলার কমলনগর উপজেলার নদীর তীরবর্তী চরমার্টিন ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ ও নবীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত। ফলে নদীতে জোয়ার পানি বাড়ার সাথে সাথে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
লোকজনের বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে যায়। কারো কারো বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ২টা থেকে নদীর তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। বিকেল ৬ টার পর পানি নামতে শুরু করে। এসময় উত্তাল ছিল মেঘনা নদী। নদীর ঢেউ তীরে আঁছড়ে পড়ে ভাঙন দেখা দেয়।
নাছিরগঞ্জ এলাকার হোসনে আরা খাতুন নামে এক নারী বলেন, ঘরে হাঁটুপানি। খুবই কষ্টে আছি, বোঝাতে পারবো না। গতকাল বুধবারও পানি ছিল। দিনে দুইবার পানি ঢুকে। জোয়ারের পানিতে আমরা ডুবি আর ভাসি।
ওহিদা খাতুন বলেন, বাড়িতে পানি ঢুকলে আমাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রান্নার কাজে সমস্যা হয়৷ বাচ্চাদেরকে নিয়েও ভয়ে থাকতে হয়৷
তার স্বামী নুর মোহাম্মদ বলেন, ঘরে সয়াবিন আছে৷ সয়াবিন পানিতে ভিজে গেছে। ঘরের বিভিন্ন মালামালও ভিজে যায়। জোয়ারের পানি বাড়িতে উঠলে আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না। একবার পানি উঠলে ৪-৫ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। রাতেও আরেকবার পানি উঠবে।
আবদুল কাদের মাঝি ও জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে আমাদের বাড়ি খুবই কাছে। জোয়ারের পানি দ্রুত পানিতে ঢুকে যায়। বাঁধের কাজ এখনো হয়নি। কাজ দ্রুত শেষ না হলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে আমরা জোয়ারের পানির কবলে পড়বো।
নবীগঞ্জের কটরিয়া মাছঘাটের জেলে জামাল মাঝি বলেন, নদীর তীরে আমার বাড়ি। আগে নদী অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে কাছে চলে আসছে। গত ৮-১০ বছর ধরেই জোয়ারের পানি আমাদেরকে ভোগাচ্ছে।
ওইঘাটের চা দোকানি আলমগীর বলেন, জোয়ারের পানি বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। দোকানেও উঠতে পারে। তাই মালামালগুলো সরিয়ে নিচ্ছি।
চৌধুরী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম বলেন, আমাদের বাড়িতে পানি উঠছে। রাতেও পানি উঠতে পারে। তাই অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত উজ জামান বলেন, দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাতব্বর হাট, পাটারির হাট, ফলকন, চরমার্টিন, চর লরেন্স, তোরাবগঞ্জ, কালকিনি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ ঘুরে দেখেছি। বেশ কিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সকলকে সাবধান ও সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে বলেন, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি ছিল। নদী উত্তাল ছিল, এখন ভাটার কারণে স্বাভাবিক হয়ে গেছে।