জুন ১৫, ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতার মৃত্যু ইস্যুতে থানায় মামলা খুনিদের গ্রেফতার দাবীতে জামায়াতের বিক্ষোভ, সামাজিক নিষ্পত্তি চায় বিএনপি

0
20250609_161238

নিজস্ব প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় সম্প্রতি জামায়াত নেতা কাউছার আহম্মদ মিলনের (৬০) মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি’র ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে বিএনপিও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা হত্যার অভিযোগ তুলে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করে আসছে জামায়াত। জেলা জামায়াতের আয়োজনে আজও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।
এদিকে বিএনপি বলছে, সামাজিক অবক্ষয়ে চুরি ও মাদক নিয়ে মারামারি হয়েছে। পরে মাওলানা কাউছারের মৃত্যু হয়েছে এটি প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট অনুযায়ী একটি স্বাভাবিক মৃত্যু। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক নিষ্পত্তি বা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াসহ রাজনৈতিক সহবস্থানের উপর জোর দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সোমবার সকালে জেলা বিএনপির আয়োজনে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আযোজন করে এ আহবান জানানো হয়।
সকাল ১০ টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, দলের যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু।
এসময় এ্যানি বলেন, আমরা জামায়াতকে অনুরোধ জানিয়েছি ঘটনাটি যেন রাজনৈতিকভাবে না নেওয়া হয়। নিহত কাউছারের ভাই আরজু ছিলো যুবলীগের কর্মী। আরজু মাদক ও তার ছেলে চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সামাজিক এ অবক্ষয়ের এলাকাভিত্তিক মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন জড়িত। এটি সম্পুর্ণ এলাকার ঘটনা, রাজনৈতিক কোন ঘটনা নয়। জামায়াতের নেতারা আমাদেরকে কথা দিয়েছেন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অথবা ১-২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করবেন। কিন্তু তারা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেননি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক সুরুতহাল অনুযায়ী মৃত্যুটি স্বাভাবিক ছিল। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে সত্য ঘটনা জানা যাবে। স্বাভাবিক মৃত্যুকে একটি অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষে নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ন এলাকাকে নষ্ট করার সুযোগ আমরা হতে দিতে চায় না। এটার দায়-দায়িত্ব উনাদেরকে (জামায়াত) বহন করতে হবে। যেহেতু উনারা কথা দিয়ে কথা রাখেননি। উনারা যেহেতু প্রকৃত ঘটনা থেকে সরে আসছে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য। এলোপাতাড়ি আমাদের নেতাকর্মীদের মামলায় দিয়ে এলাকায় এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এটি যেকোন সময় একটি খারাপ পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। ঘটনাটির ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত ও তদন্তের পর সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি অথবা আইনগতভাবে বিচার হতে পারে। ঘটনাটি কোনভাবেই রাজনৈতিক ঘটনার দিকে নেবেন না। কারণ রাজনৈতিক ঘটনার দিকে নিতে গেলে সমাজের মধ্যে হানাহানি বেড়ে যাবে। একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে। একই বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র অন্যান্য নেতারাও।

এদিকে বেলা ১২ টার দিকে শহরের আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে জেলা জামায়াতের আয়োজনে দলীয় নেতা হত্যার প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে মিছিলটি বৃষ্টি উপেক্ষা করে উত্তর তেহমুনীতে গিয়ে শেষ হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ড. রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসাইন নুরনবী প্রমুখ।
এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ড. রেজাউল করিম বলেন, একের পর এক জামায়াত নেতা-কর্মী হত্যা করে, হামলা চালিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবেনা। এসব হামলা ও চোখ রাঙ্গানো বন্ধ করতে হবে। জামায়াত নেতাকে পিটিয়ে হত্যার পরও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। নিহতের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত সহবস্থানের রাজনীতিতে বিশ^াস করে।

প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার আগে বৃহস্পতিবার সকালে পৌর শহরের রাজিবপুরে দু’পক্ষের মারামারি হয়। এতে জামায়াতের ওলামা বিভাগের নেতা কাউছার হামলার শিকার হন। পরে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যায় নিহতের স্ত্রী শিল্পি আক্তার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এজাহারভুক্তরা বিএনপি’র অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *